অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী

কৃষ্ণনগর, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতবর্ষ
Send Message

আমার মৃত্যুর পরে

আমার মৃত্যুর পরে
কালপুরুষকে আগের মতো ঠিকই দেখা যাবে,
সপ্তর্ষিমন্ডল যেমন জ্বলে তেমনই জ্বলবে,
আকাশগঙ্গার অস্তিত্বটা থেকে যাবে,
সূর্য যে সময়ে ওঠার উঠবে
যে সময়ে অস্ত যাওয়ার যাবে।

আমার মৃত্যুর পরে
আকাশের নীল রঙ একটুও কমবে না,
কালবৈশাখী যে ঋতুতে আসে সেই ঋতুতেই আসবে,
তুফানি ঝড়ে সমুদ্র উত্তাল হবে,
মেঘেরা একে অপরের সাথে যেমন ধাক্কা খায় খাবে,
খরা মাটিতেও ঠিকই বৃষ্টি ঝরবে।

আমার মৃত্যুর পরে
জবা ফুল যেমন শ্যামা মায়ের চরণে ঠাঁই পায় তেমনই পাবে,
হরিনাম সংকীর্তনের আসর ঠিকই বসবে মন্দিরে মন্দিরে,
মহাদেব যেমন অল্পতে সন্তুষ্ট থাকেন তেমনই থাকবেন,
লোকের মুখে মুখে বেহুলা লখিন্দরের মাহাত্ম্য কথা ঠিকই ঘুরবে।

আমার মৃত্যুর পরে
নদীতে জোয়ার আগের মতো ঠিকই আসবে,
ভাটায় মাঝি গানও ধরবে,
নদীর দুই কূল ভাঙা গড়ার কাজে কেউ বাঁধা দেবে না ,
আকাশের সাথে সমুদ্র ঠিকই মিশবে,
সাতটা সমুদ্র থেকেই যাবে।

আমার মৃত্যুর পরে
গ্ৰামের মাঠ বন আর মেঠো পথে গোধূলি নেমে আসা
যেমন বরাবরের মতো সুন্দর দেখতে লাগে তেমনই লাগবে,
নদীর ধারে বটের ছায়ায় বসে কোনো উদাস কবির কল্পনায় ডুবে কবিতা লেখায় কোনো বিরতি আসবে না,
আলপথ ধরে রাখাল ঠিকই বাঁশি বাজাতে বাজাতে এগোবে।

আমার মৃত্যুর পরে
কত শিশু জন্মগ্ৰহণ করবে মায়ের কোল আলো করে,
কত মানুষ তাদের স্বজনদের কাঁদিয়ে
চিতায় পুড়বে নয়ত কবরে স্থান পাবে,
কত সন্তানহীন মা মন্দিরে মসজিদে ঈশ্বরের কাছে সন্তান প্রার্থনা করবে।

আমার মৃত্যুর পরে
পাহাড় আগের মতো সুন্দর থাকবে,
ঝর্ণা চঞ্চল হয়েই থাকবে,
রামধনু বৃষ্টি শেষে পূর্ব আকাশে ঠিকই উঠবে,
মুক্ত পাওয়া যাবে সেই ঝিনুকেই।

আমার মৃত্যুর পরে
পৃথিবীর সকল মানুষের কাজে কোনো পরিবর্তন আসবে না,
পৃথিবীর সকল পশুপাখি যেমন খেলা করে তেমনই খেলবে,
মা যেমন শিশুকে আদর করে কপালে কাজলের টিপ পরায় তেমনই পরাবে,
শিশু মায়ের কোলে যেমন ঘুমিয়ে পড়ে তেমনই পড়বে।

আমার মৃত্যুর পরে
এই ব্রহ্মান্ড থেকে যাবে,
ঈশ্বরও থেকে যাবেন,
শুধু আমি থাকবো না।

[আমার মৃত্যুর পরে]

~অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তী
66 Total read