শেখ মহাম্মদ যতি যখনে রচিল পুথি
সংখ্যা সপ্ত বিংশ নব শত।
চিতাওর গড়েশ্বর রত্নসেন নৃপবর।
শুক মুখে শুনিয়া মহত।।
যোগী হৈআ নরাধিপ চলিল সিংহল দ্বীপ
ষোল শত কুমার সঙ্গতি।
লঙ্ঘি বনখণ্ড বাট উত্তরিলা সিন্ধু ঘাট
নৌকা দিলা নৃপ গজপতি।।
সিংহল দ্বীপেতে গিয়া নানাবিধ দুঃখ পাইয়া
বহু যত্নে পাইল পদ্মাবতী।
পক্ষীমুখে শুনি কথা নাগমতি চিন্তাযুতা
পুনি দেশে চলিল নৃপতি।।
সাগরে পাইয়া ক্লেশ আসি চিতাওর দেশ
কৈল বহু উৎসব আনন্দ।
রাঘব চেতন গুণি অবিমর্ষি কহি বাণী
প্রতিপদে দেখাইল চান্দ।।
তত্ত্ব জানি নৃপবর তাকে কৈলা দেশান্তর
যাইতে হৈল কন্যা দরশন।
বহুল আনন্দ মনে করের কঙ্কন দানে।
পরিতুষি পাঠাইল ব্রাহ্মণ।।
সুলতান আলাউদ্দিন দির্লীশ্বর জগজিন
প্রচণ্ড প্রতাপ ছত্রধর।
পণ্ডিত ব্রাহ্মণ তথা কহিল কন্যার কথা।
শুনি হরষিত নৃপবর।।
শ্রীজা নামে বিপ্রবর পাঠাইল রাজ্যধর
কন্যা মাগি রত্নসেন স্থানে।
পদ্মাবতী না পাইয়া শ্রীজা আইল পলটিয়া
সুনি শাহা ক্রোধ হৈল মনে।।
বহুল মাতঙ্গ বাজী চতুরঙ্গ দল সাজি
গেলা চিতাওর মারিবারে।
দ্বাদশ বৎসর রণ তথা ছিল অখণ্ডন
রত্নসেনে ধরিল প্রকারে।।
দিল্লীশ্বর পাটে আইল নৃপ কারাগারে থুইল
তাড়না করিল নানা ভাঁতি।
গোরা বাদিলা নাম ছিল রত্নসেন ঠাম
মুক্ত কইল কপট যুকতি।।
চিতাওর দেশে আসি বাঞ্চিলেক সুখে নিশি
পদ্মাবতী সঙ্গে করি রঙ্গ।
দেবপাল নৃপ কথা পদ্মাবতী মুখে তথা।
শুনি নৃপমন হৈল ভঙ্গ।।
সর্বারম্ভে তথা গিয়া দেবপাল সংহারিয়া
যুদ্ধে ক্ষত আইল নৃপতি।
সপ্তম দিবসান্তর মৈল রত্নসেন বর
দুই নারী সঙ্গে হৈলা সতী।।
পুনি সাজি দিল্লীশ্বর আসি চিতাওর গড়
চিতাধূম দেখিলা বিদিত।
সতী গতি পদ্মাবতী শুনি শাহা মহামতি
মনে হৈল পরম দুঃখিত।।
তবে চিতাওর বরি দিল্লীশ্বর গেলা ফিরি
পুস্তকের এহি বিবরণ।
মহাদেবী পাত্রবর রূপে গুনে বিদ্যাধর
শ্রীযুত ঠাকুর মাগন।।
তাহান আরতি ভাবি হীন আলাওল কবি
রচিলেক সরস পয়ার।
সুর শশী বায়ুজল যতদিন ক্ষিতিতল
নামকীর্তি রহুক সংসার।।