হে পদ্মা ! প্রলয়ংকরী ! হে ভীষণা ! ভৈরবী সুন্দরী !
হে প্রগলভা ! হে প্রবলা ! সমুদ্রের যোগ্য সহচরী
তুমি শুধু, নিবিড় আগ্রহ আর পার গো সহিতে
একা তুমি সাগরের প্রিয়তমা, অয়ি দুবিনীতে !
দিগন্ত বিস্তৃত তোমার হাস্যের কল্লোল তারি মত
চলিয়াছে তরঙ্গিয়া,-চির দৃপ্ত, চির অব্যাহত |
দুর্নমিত, অসংযত, গূঢ়চারী, গহন গম্ভীর ;
সীমাহীন অবজ্ঞায় ভাঙিয়া চলেছ উভতীর |
রুদ্র সমুদ্রের মত, সমুদ্রেরি মত সমুদার
তোমার বদরহস্ত বিতরিছে ঐশ্বর্যসম্ভার |
উর্বর করিছ মহি, বহিতেছ বাণিজ্যের তরী
গ্রাসিয়া নগর গ্রাম হাসিতেছ দশদিক ভরি |
অন্তহীন মূর্ছনায় আন্দোলিত আকাশ সংগীতে,-
ঝঙ্কারিয়া রুদ্রবীণা, মিলাইছ ভৈরবে ললিতে
প্রসন্ন কখনো তুমি, কভু তুমি একান্ত নিষ্ঠুর ;
দুর্বোধ, দুর্গম হায়, চিরদিন দুর্জ্ঞেয় সুদূর !
শিশুকাল হতে তুমি উচ্ছৃঙ্খল, দুরন্ত দুর্বার ;
সগর রাজার ভস্ম করিয়ে স্পর্শ একবার !
স্বর্গ হতে অবতরি ধেয়ে চলে এলে এলোকেশে,
কিরাত-পুলিন্দ-পুণ্ড্র অনাচারী অন্ত্যজের দেশে !
বিস্ময়ে বিহ্বল-চিত্ত ভগীরথ ভগ্ন মনোরথ
বৃথা বাজাইল শঙ্খ, নিলে বেছে তুমি নিজ পথ ;
আর্যের নৈবেদ্য, বলি, তুচ্ছ করি হে বিদ্রোহী নদী !
অনাহুত-অনার্যের ঘরে গিয়ে আছ সে অবধি |
সেই হকে আছ তুমি সমস্যার মত লোক-মাঝে,
ব্যাপৃত সহস্র ভুজ বিপর্যয় প্রলয়ের কাজে !
দম্ভ যবে মূর্তি ধরি স্তম্ভ ও গম্ বুজে দিনরাত
অভ্রভেদী হয়ে ওঠে, তুমি না দেখাও পক্ষপাত |
তার প্রতি কোনদিন, সিন্ধুসঙ্গী, হে সাম্যবাদিনী !
মূর্খে বলে কীতিনাশা, হে কোপনা কল্লোলনাদিনী !
ধনী দীনে একাসনে বসায়ে রেখেছ তব তীরে,
সতত সতর্ক তারা অনিশ্চিত পাতার কুটিরে ;
না জানে সুপ্তির স্বাদ, জড়তার বারতা না জানে,
ভাঙ্গনের মুখে বসি গাহে গান প্লাবনের তানে,
নাহিক বস্তুর মায়া, মরিতে প্রস্তুত চির দিনই !
অয়ি স্বাতন্ত্রের ধারা ! অয়ি পদ্মা ! অয়ি বিপ্লাবনী !