অমা-যামিনীর গহন আঁধারে চুপি চুপি এল প্রিয়া,
দ্বিগুণ-আঁধার খর্জ্জুর বীথি, তাহারি আড়াল দিয়া !
আঙুরের মত অলকগুচ্ছে গোলাপের মালা পরি',
মৃদু উশীরের মদির গন্ধে নিশীথ আকাশ ভরি'
কাজল-উজল কালো কটাক্ষে হানিয়া বিজলী-হাসি,
ফেরোজা রঙের বসন পরিয়া শিথানে দাঁড়া'ল আসি' !--
বীণানিন্দিত মধুরকন্ঠে কহিল --রে অনুরাগী,
শূন্যশয়নে আমারে মাগিয়া জাগিয়া কিসের লাগি ?
করুণা তাহার হৃদয়ে হানিল সুখের মতন ব্যথা,
যুড়ি' যোড় পাণি বিগলিত-বাণী কন্ঠে কহিনু কথা,--
তব অঞ্চল বসন্তবায়ে হৃদয়ে যে ফুল ফুটে,
তব মঞ্জীরসঙ্গীতরবে হৃদয়ে যে ধ্বনি উঠে,---
তাহারি গন্ধে, তাহারি ছন্দে রচিয়া গজল-গীতি
তোমারি কুঞ্জ-দুয়ারে গাহিয়া শুনাইব নিতি নিতি ;
নাহি চাই খ্যাতি, যশে কাজ নাই, চাহিনাক ধনমান,
তোমার স্তবের যোগ্য করিয়া শিখাইয়া দাও গান |
না কহিয়া কথা, না বলিয়া কিছু--- লীলায়িত হেলাভরে
সেতারটি শুধু লইল টানিয়া কোমল বুকের পরে ;
অঙ্গুলিঘাতে তারগুলি তা'র সঙ্গীতে ভরি' দিয়া
আমার কোলের সঙ্গীটি মোরে ফিরাইয়া দিল প্রিয়া !
গোলাপের কুঁড়ি তখনো ভাবেনি ফুটিতে হইবে কিনা,
ডানার মাঝারে মাথাটি গুঁজিয়া চাতকী চেতনাহীনা ;
অমা যামিনীর গভীর আঁধারে মিলাইয়া গেল প্রিয়া---
শিশির-শীতল খর্জ্জুর-বীথি, তাহারি ভিতর দিয়া !
তার পর হ'তে বাজিছে সাহানা সোহিনী সিন্ধু কাফি,
সাথে সাথে সেই পরম পরশ উঠিতেছে কাঁপি' কাঁপি' ;
তালে তালে উঠে দুলে , দুলে' তারি হৃদয়েরি আকুলতা,
সুরে সুরে সদা ঘুরে' ঘুরে' ফিরে তাহারি গোপন কথা !