নিঃশঙ্ক, নিঃশব্দপদে একদিন এসেছিলে কাছে
ঈপ্সিত মৃত্যুর মতো, নয়নে যেটুকু বহ্নি আছে,
অধরে যেটুকু ক্ষুধা -- সব দিয়ে লইলাম মুছে
লোলুপ লাবণ্য তব; দিনান্তের দুঃখ গেলো ঘুচে,
উদিলো সন্ধ্যার তারা দিগ্বধূর ললাটের টিপ |
কদম্বপ্রসব-সম জ্ব'লে ওঠে কামনাপ্রদীপ,
যুগ্ম দেহে ; শ্মশানে অতসী হাসে, নিকষে কনক ;
মেঘলগ্ন ঘনবল্লী আকূল পলকে নিষ্পলক |
কঙ্করে অঙ্কুর জাগে, মরুভূতে ফুটিলা মালতী--
তুমি রতি মূর্তিমতী, আর আমি আনন্দ-আরতি |
দেহের ধূপতি হ'তে জ্ব'লে ওঠে বাসনার ধুনা
লেলিহরসনা, তবু কালো চোখে কোমল করুণা |
শুভ্র ভালে খেলা করে তৃতীয়ার ম্লান শিশু শশী,
তোমার বরাঙ্গ যেন সন্ধ্যাস্নিগ্ধ, শ্যামল তুলসী |
ভুজের ভুজঙ্গতলে হে নতাঙ্গী, নির্ভয় নির্ভরে
তোমার স্তনাগ্রচূড়া কাঁপিলো নিবিড় থরথরে |
স্ফুরত্প্রবাল ওষ্টে গূঢ়ফণা চুম্বন-উত্সুক,
এপারে রক্তাশোক, অন্য তটে হিংসুক কিংশুক |
শ্লথ হ'লো নীবিবন্ধ, চূর্ণালক, শিথিল কিঙ্কিণী,
কজ্জলে মলিন হ'লো পান্ডু গন্ড, কাটিলো যামিনী |
দূরে বুঝি দেখা দিলো দিগ্বালার রজত-বলয়,
বলিলাম কানে-কানে : ‘মরণের মধুর সময় |'
আজি তুমি পলাতকা, মুক্তপক্ষ পাখি উদাসীন,
ক্লান্ত, দূর নভোচারী দিগন্তের সীমান্তে বিলীন |
বিদ্যুৎ ফুরায়ে গেছে, কখন বিদায় নিলো মেঘ,
অবিচল শূন্যতার নভোব্যাপী নিস্তব্ধ উদ্বেগ
আবরিয়া রহিয়াছে হৃদয়ের অনন্ত পরিধি
চাহি না ঘৃণিত মৃত্য, তব গুপ্ত হীন প্রতিনিধি |
নীবিবন্ধ শিথিলিতে কটিতটে যদিও কিঙ্কিনী,
বাজে আজো, কজ্জলে মলিন গন্ড, তবু, কলঙ্কিনী,
চাহি না অতীত মৃত্যু | নভস্তলে অনিবন্ধনীবি
ঘুম পায় পার্শ্বে মোর বীরভোগ্যা প্রেয়সী পৃথিবী |
তারে চাই ; তাহারি সুধার তরে অসাধ্য সাধনাস,
বিস্মিত আকাস ঘিরি' সুস্মিত, সনীল অভ্যর্থনা,
অজস্র প্রশ্রয় | মৃত্তিকার উদ্বেলিত পয়োধরে
সম্ভোগের সুরাস্রোত ওষ্ঠাধরে উচ্ছসিয়া পড়ে,
শস্য ফলে, নদী বহে, ঊর্ধ্বে জাগে উত্তুঙ্গ পর্বত,
হাস্য করে মৌনমুখে উলঙ্গ, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ |
আয়ুর সমুদ্র মোর দুই চক্ষে, মৃত্যু পদলীন,
তোমার বিস্মৃতি দিয়া পৃথিবীরে করেছি রঙিন |
নক্ষত্র-আলোক হ'তে সমুদ্রের তরঙ্গ অবধি
ব'হে চলে একখানি পরিপূর্ণ যৌবনের নদী |
তারি তলে করি স্নান, নাহি কূল, নাহি পরিমিতি,
তুমি নাই, আছে মুক্তি, পৃথ্বীব্যাপী প্রচুর বিস্মৃতি |